শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ১০:০৫ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক ॥
বিশ্বজুড়ে ক্ষুধা ও অভাবকে সম্পদের স্বল্পতা নয়, বরং বর্তমান অর্থনৈতিক কাঠামোর ব্যর্থতা ও নৈতিক অবক্ষয় হিসেবে কঠোর সমালোচনা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর মতে, ক্ষুধা দূরীকরণের চেয়ে অস্ত্রের পেছনে বিশ্বের বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা এক চরম নৈতিক ব্যর্থতা।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ইতালির রোমে অনুষ্ঠিত বিশ্ব খাদ্য ফোরামের এক সমাবেশে প্রধান বক্তা হিসেবে ভাষণ দেওয়ার সময় ড. ইউনূস এই মন্তব্য করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ২০২৪ সালে যখন ৬৭৩ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার্ত ছিল, তখন পর্যাপ্ত খাদ্য উৎপাদন সত্ত্বেও এই পরিস্থিতি কেন? তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এটি উৎপাদনের ব্যর্থতা নয়— এটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ব্যর্থতা, এটি এক নৈতিক ব্যর্থতা।”
অধ্যাপক ইউনূস বিশ্বের সামরিক ব্যয়ের সঙ্গে ক্ষুধার্ত মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিলের তুলনা টেনে বিশ্ব নেতাদের অগ্রাধিকারের বিষয়ে গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমরা যখন ক্ষুধা দূর করতে কয়েক বিলিয়ন ডলার জোগাড় করতে পারিনি, তখনই বিশ্ব অস্ত্রের পেছনে ২ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে।”
ভাষণে তিনি বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে অর্জন তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন, আয়তনে ইতালির অর্ধেক হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের খাদ্যের যোগান দিচ্ছে। এর পাশাপাশি, মিয়ানমারে সহিংসতার মুখে পালিয়ে আসা ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকেও আশ্রয় দিয়েছে।
ড. ইউনূস জানান, বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে এবং বিশ্বের শীর্ষ ধান, শাকসবজি ও মিঠাপানির মাছ উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটি। কৃষকেরা ফসলের চাষের ঘনত্ব ২১৪ শতাংশে উন্নীত করেছেন এবং ১৩৩টি জলবায়ু-সহনশীল ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন। সরকার কৃষকদের মেকানাইজেশনে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ভর্তুকি দিয়েছে এবং শক্তিশালী খাদ্য বিতরণ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে। তিনি আরও বলেন, মাটি, পানি ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষার মাধ্যমে কৃষি সবুজ হয়েছে এবং শিশুদের খর্বতা কমেছে।
ড. ইউনূসের এই বক্তব্য বিশ্ব নেতাদের অগ্রাধিকারের বিষয়ে গভীর প্রশ্ন তুলেছে এবং ক্ষুধা নির্মূলের জন্য বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে।